শারমিনের অনন্য লড়াই: দুই হাত অকেজো, তবু পা দিয়ে লিখে বিসিএস পরীক্ষা
শারমিনের অনন্য লড়াই: দুই হাত অকেজো, তবু পা দিয়ে লিখে বিসিএস পরীক্ষা
জন্ম থেকেই শারমিন আক্তারের দুই হাত অকেজো। লিকলিকে দুটো হাত এবং বাঁকানো তালু থাকলেও তিনি সেগুলো দিয়ে কিছু ধরতে পারেন না। তবে শারমিন থেমে থাকেননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে পা দিয়েই লেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন তিনি। এই সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়েই শুক্রবার সকালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কেন্দ্রে অংশ নেন ৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায়।
বেঞ্চে দুই পা তুলে, ডান পা দিয়ে লেখেন শারমিন। কলমে খানিকটা ভর দিয়ে, ধীরে ধীরে লিখতে হয়। পা দিয়েই লিখে তিনি আজ তার স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়েছেন।
শারমিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি দুজন স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। পরীক্ষার দিনও স্বজনরা সঙ্গে ছিলেন। পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রে ঢুকার সময় শারমিন বলেন, “পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি ভালো, তবে পরীক্ষায় পাশ করলেও চাকরির নিশ্চয়তা নেই। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছি, কিন্তু ভাইভায় ডাক পাইনি।”
শারমিন জানালেন, চাকরির জন্য অনেক পরীক্ষা দিয়েছেন, কিছুতে পাশও করেছেন, কিন্তু পরে ডাক মেলেনি। তিনি বলেন,
“চাকরির আবেদন করি, পড়াশোনা করি, পরীক্ষা দিই, কোথাও টিকলেও পরে আর ডাক আসে না। এভাবেই চলছে আমার জীবন।”
শারমিন ফেসবুকেও নিজের দৈনন্দিন সংগ্রাম শেয়ার করেন। তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, তাঁকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য সহায়তা করতে। তিনি বলেন,
“অন্যদের দুই হাত আছে, তা দেখে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, যার দুটি হাত নেই, তার জীবনে দুঃখ ছাড়া কিছু নেই। তবে আমি থেমে থাকব না।”
ঢাকায় এসে পরীক্ষার জন্য একা আসা কঠিন হয়। খরচ বেড়ে যায়, তাই সঙ্গে কাউকে আনতে হয়। সরকার থেকে শারমিন প্রতিবন্ধী ভাতা পান—প্রতি তিন মাসে ২,৫০০ টাকা। এই টাকাই পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ মেটাতে ব্যবহার হয়।
শারমিন নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে ২০২২ সালে এমএ পাস করেছেন। তিনি তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। পরিবারে সামান্য জমি আছে, বাবা কৃষি কাজে নিয়োজিত। এক ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ঋণ নিয়েছেন। এক বোন ডিগ্রি পড়ছেন। শারমিন আশা করেন, সরকারি চাকরি পেলে সংসারের হাল ধরতে পারবেন।
শারমিন পিএইচডি করতে চান এবং সরকারি অফিসার হতে চান। বিশেষ বিসিএসে প্রতিবন্ধী কোটা অনুযায়ী তিনি আবেদন করেছেন। আজ পরীক্ষার পরে জানালেন, এমসিকিউ পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে, তবে চাকরি পাওয়া নিশ্চিত নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ বছর, তাই শারমিনের হাতে সময় কম—প্রায় দেড় বছরের মতো।
আজ দুপুরে পরীক্ষার শেষে বৃষ্টির মধ্যে বাসে চেপে নোয়াখালীর পথে রওনা হন শারমিন। বাসে বসে ফোন করে তিনি বললেন,
“আমি একটি সরকারি চাকরি চাই।”
📷 ছবি: মানসুরা হোসাইন
0 Comments